জনবল সংকটে গলদঘর্ম বিআরটিএ

Passenger Voice    |    ১২:৩৭ পিএম, ২০২২-১০-১১


জনবল সংকটে গলদঘর্ম বিআরটিএ

দেশে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন রয়েছে সাড়ে ৫৩  লাখ। এগুলোর লাইসেন্সিং, নিয়ন্ত্রণ, ফিটনেসসহ সবধরনের সেবা দিতে হয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-কে। বিস্ময়ের বিষয়, এই অর্ধকোটি যানের সেবায় জনবল আছে মাত্র সাত শতাধিক। পরিস্থিতি কতটা শোচনীয়- তা সহজেই অনুমেয়। এই সীমিত জনবল আর গুটিকয়েক সরঞ্জামাদি নিয়েই চলতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটিকে।

প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশব্যাপী লাখ লাখ গ্রাহকের সেবা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষ গলদঘর্ম হলেও কারোর কোন তুষ্টি নেই।  সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় দেড় কোটি লোকের সেবা দিতে হচ্ছে এই মুষ্টিমেয় জনবল দিয়েই। এজন্যই কমানো যাচ্ছে না অভিযোগের সংখ্যা। পাহাড়সম সমস্যা আর অভিযোগ নিয়েই সামলাতে হচ্ছে দেশের বিপুল সংখ্যক যানবাহন ও চালককে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন আইন কার্যকর হলেও বিআরটিএ-কে গতিশীল করতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো, জনবল, আধুনিকায়নের জন্য নেয়া অধিকাংশ উদ্যোগই এখনও আলোর মুখ দেখেনি। সারাদেশে বিআরটিএ-র নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন, নিজস্ব ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট স্থাপন উদ্যোগ ঝুলে আছে। কয়েকটি স্থানে জমি অধিগ্রহণ করার পরেও ভবন নির্মাণের জন্য গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের মধ্যে শুধু চিঠি চালাচালি হচ্ছে।

বর্তমানে রাজধানীতেও ভাড়া ভবনে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। জেলা শহরে ডিসি অফিসে একটি কক্ষে চলছে পরাশ্রয়ীর মতো কার্যক্রম। রাজস্ব আদায়ের দিকে বেশ সন্তোষজনক একটি মাত্রা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির আধুনিকায়নে নেই তেমন কোন উদ্যোগ। ঢাকা ও বিভাগীয় অফিসগুলোতে বসে কাজ করার ন্যূনতম সুযোগ থাকলেও জেলা অফিসগুলোর অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। কোন জেলাতেই নেই নিজস্ব কোন ভবন ও আলাদা অফিস। জেলা প্রশাসকের অফিসেই ছোট্ট একটা রুমে কোনক্রমে একটি চেয়ার টেবিল নিয়ে বসতে হচ্ছে। যানবাহন পরীক্ষা করা বা প্রশিক্ষণ দেয়ার নেই প্রয়োজনীয় মাঠ। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাঠের অভাবে ভালভাবে যান পর্যবেক্ষণ না করেই দিতে হচ্ছে ফিটনেস ও অন্যান্য সেবা।

এমন পরিস্থিতির কবে অবসান হবে জানতে চাইলে সড়ক যোগাযোগ সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বিআরটিএ আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কার্যক্রম অটোমেশন করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশের ১৮টি জেলায় বিআরটিএ-র স্বতন্ত্র অফিস ও অন্যান্য কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এভাবে প্রয়োজনীয় সেবার গতি বাড়াতে অটোমেশনের মতো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শনে দেখা গেছে, ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট, ট্যাক্স টোকেন, মালিকানা পরিবর্তন কার্যক্রমের রাজস্ব অনলাইনে নিলেও অবকাঠামো উন্নয়ন না হওয়ার কারণে বাস্তবে ভোগান্তি দূর করা যাচ্ছে না। দুর্নীতিরও লাগাম টানা যাচ্ছে না সহজে। আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হলেও এসব কার্যক্রমে প্রতিটি কার্যালয়ে গ্রাহকদের এখনও শিকার হতে হচ্ছে নানা হয়রানির।

প্রতিবছর এই খাতে সরকার তিন হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করলেও বিআরটিএ-র কোন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে না। গ্রাহকরা পাচ্ছে না কাঙ্কিত সেবা। বিআরটিএ-র কর্মকর্তারাও প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন। তবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার ফাঁদে আটকে আছে এসব উদ্যোগ। এখানে সবচেয়ে বড় সংকট জনবল। মাত্র ৯৩১টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে ৭২৫ জনবল সক্রিয় রয়েছে। এমন অবস্থায় ন্যূনতম ২৩শ জনবল কাঠামোর একটি প্রস্তাব দেয়া হলেও জনপ্রশাসন মাত্র ৩১৫ জন অনুমোদন করে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়।

কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সেটা কেটেকুটে মাত্র ৯৬টি পদ অনুমোদন দিয়েছে। এই পদগুলোতে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিআরটিএ কতটা অবহেলিত এটা তার  অন্যতম নজির। আরেকটি প্রকল্প ছিল ড্রাইভিং কম্পিটেনসি টেস্ট বোর্ড (ডিসিটিবি)- যার জন্য ২০ একর জমির ওপরে রাজধানীর সবধরনের গাড়ির যাচাই, ড্রাইভিং পরীক্ষা নেয়া হবে। এই প্রকল্পও পরিকল্পনায় আটকে আছে।

জানা গেছে, ২০১০ সালে বিআরটিএ আধুনিকায়নের জন্য কয়েকটি প্রকল্প পরিকল্পনা নেয়া হয়। এর অংশ হিসেবে বিভাগীয় শহরে সব ধরনের সুবিধাসহ নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন, নিজস্ব ড্রাইভিং ইনস্টিটিউট চালু করা, এ ছাড়া জেলা শহরে ডিসি অফিসের বাইরে নিজস্ব ভবনে স্থাপন করা, লোকবল ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য আলাদা জনবল নিয়োগ প্রদান করা। বিভিন্ন ধরনের ফি অনলাইনের মাধ্যমে গ্রহণ করার কথা ছিল। এর মধ্যে অনলাইনে ফি আদায় কার্যক্রম পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়েছে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রত্যাশী গ্রাহক ঘরে বসেই নিজের শিক্ষানবিস ড্রাইভিং লাইসেন্স লার্নার কার্ড বিআরটিএ সার্ভিস পোর্টাল এর মাধ্যমে করতে পারছেন, এবং গাড়ি যাচাই করে ফিটনেস সনদ নেয়ার জন্য গ্রাহক অনলাইনে এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। বাকিগুলো এখনও কাগজে-কলমে। তবে কার্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৫ সালে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে নতুন জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়িতে ২৪ কাঠা ও পূর্বাচলে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণের জন্য প্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এরপরে কোন উদ্যোগ নেই। এসব প্রকল্প নিয়ে চলতি বছরে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাস্তবায়নের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে প্রতিবার। দিয়াবাড়ি, জোয়ারসাহারা, ইকুরিয়া ছোট্ট একটি ভবনে চলছে সবধরনের কার্যক্রম। মিরপুর অফিসে গিয়ে দেখা গেছে, শত শত গাড়ি আর হাজারো মানুষের ভিড়। বিভিন্ন সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের দাঁড়ানোর ঠাঁই নেই।

সেখানে চলছে নতুন যানবাহন রেজিস্ট্রেশন মালিকানা বদলি ফিটনেস যাচাই ড্রাইভিং লাইসেন্সের কার্যক্রম ও নাম্বার প্লেট সংযোজনসহ সকল কার্যক্রম। জনবল সংকটের কারণে হিমশিম খেতে হচ্ছে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ফলে গ্রাহকদের দালালদের কাছে ধরনা দিতে হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসার জায়গা পর্যন্ত নেই এখানে।

প্রতিটি কার্যালয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ প্রদানের জন্য জনবল, অবকাঠামো ও আধুনিক লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। মাঠপর্যায়ে লাইসেন্স প্রত্যাশীদের পরীক্ষা নেয়ার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মানসম্পন্ন পরীক্ষা নেয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া আধুনিক ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার না থাকায় ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে ফিটনেস সনদ দিচ্ছে বিআরটিএ। নেই পর্যাপ্ত রেকর্ড রুম। ফলে যানবাহন সংশ্লিষ্ট তথ্য দ্বিতীয় বার আর খুঁজে পাওয়া খুবই কষ্টকর। এই চিত্র সারাদেশের বিআরটিএ কার্যালয়ে।

বিআরটিএ  প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় করে। গত অর্থবছরে ৩ হাজার ৭৬ কোটি টাকা, আগের বছর ২৬শ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। গ্রাহকদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করা হলেও তাদের সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাড়ানো হচ্ছে না জনবল ও অবকাঠামোগত সুবিধা।

মাঠ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী এ মন্ত্রণালয়ের নতুন সচিব হিসেবে যোগ দেয়ার পর তিনি প্রায়ই আকস্মিক পরিদর্শন করছেন বিভিন্ন অফিস। প্রতিটি অফিসে হয়রানি কমানোর কড়া নির্র্দেশ দিচ্ছেন। তিনি চেষ্টা করছেন প্রতিটি অফিসেই কাজের গতিশীলতা, দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছতা ও জবাবাদিহিতা প্রতিষ্ঠিত করার। তাঁর সহযোগী হিসেবে বর্তমান চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারও বেশ তৎপর রয়েছেন।

তিনি এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না। যেখানেই যে অভিযোগ পাওয়া যায়, সেখানেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মন্ত্রী ও সচিবের কড়া নির্দেশ রয়েছে মানুষের সেবা নিশ্চিত করার। আমরা সেভাবেই সার্বক্ষণিক সক্রিয় রয়েছি। নানা সীমাবদ্ধতার মাঝেও আমাদেরকে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। জনবলের প্রচুর ঘাটতি ও অবকাঠামোগত সমস্যা নিয়েই দেশের সাড়ে ৫৩ লাখ যানবাহন দেখভাল করতে হচ্ছে।

বিআরটিএ সূত্র জানায়, সারাদেশের ৯টি বিভাগীয় শহরে ভিআইসি কাম মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের জোর প্রচেষ্টা চলছে। ১৮টি জেলার ভূমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজও এগিয়ে চলছে। ঢাকায় বর্তমানে তিন সাবস্টেশনের সঙ্গে আরও একটি স্থাপনের অনুমোদন মিলেছে। মিরপুর ও উত্তরা অফিসের কিছু সংস্কার কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এসব বিষয় সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী নিজেই সার্বক্ষণিক তদারকিতে রেখেছেন জনভোগান্তি নিরসনে।

সরেজমিনে যা চোখে পড়ে- সর্বশেষ গত সপ্তাহে ঢাকার মিরপুর, জোয়ারসাহারা ও উত্তরা অফিস পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন শত শত গ্রাহকের ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে যাবার উপক্রম। এসব অফিসে কেউ আসেন পরীক্ষা দিতে, লাইসেন্স নবায়ন করতে, কেউ নতুন পেতে ও কেউবা গাড়ি টেস্ট করাতে। উপস্থিত লোকের তুলনায় স্থানসঙ্কুলান না হওয়ায় রাস্তার ওপর দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয় লম্বা লাইনে। ব্যাংকে গিয়েও দেখা যায়- গাদাগাদি। শত শত লোকের ভিড়ে চেনাও দায় কোনটা ‘দালাল’ কোনটা ‘আলাল’।

সবচেয়ে বেশি ভিড় চোখে পড়ে মিরপুর অফিসে। এখানে বসেন ঢাকা বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। অফিসের প্রবেশদ্বারেই দেখা যায় রাস্তার ওপর বিশালাকার লাইন, যেগুলো থাকার কথা ছিল অফিসের ভেতরে। স্থানসঙ্কুলান না হওয়ায় বিভিন্ন মডেলের যানবাহন মেইন রোডের ওপরই রাখতে হয়। এতে ওই এলাকায় যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে জনতার।

ভেতরে যেখানে ভেহিকেল টেস্টিং সেন্টার সেখানেও প্রয়োজনের তুলনায় ছোট্ট পরিসরে কোনক্রমে কাজ চালাতে হচ্ছে। পাশেই দেখা যায়-একাধিক লম্বা লাইনে গ্রাহকের বিরক্তিকর অপেক্ষা। কেউ আসছেন টোকেন জমা দিতে কেউ লার্নার লাইসেন্স নিতে। ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়েও ঠেলাধাক্কা খেতে হয়। দেশের বৃহত্তর এই সেন্টারটিতে প্রতিদিন কমপক্ষে কয়েক হাজার গ্রাহককে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় কর্তব্যরত পরিদর্শক, সহকারী পরিচালকসহ অন্যান্য কর্তার। পাশের ছোট্ট একটা অফিসে বসেন বিভাগীয় পরিচালক শহীদুল্লাহ।

তাঁকে এই সেন্টারের পাশাপাশি গোটা বিভাগের দাপ্তরিক কাজ সামাল দিতে হয়। এদের মোকাবেলা করতে গিয়ে গলদঘর্ম পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এর বাইরেও তাঁকে ফেস করতে হয় ভিআইপি, সিআইপি, সাংবাদিক, বুদ্বিজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকেও। সীমিত জনবল দিয়েই তাঁকে সবাইকে সন্তুষ্ট করতে হচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কেউ কষ্ট করে উনার কাছে পৌঁছতে পারলে, হতাশ হতে হয় না। কাজ আদায় করেই ফিরেন।

জানা গেছে, এ অফিসে প্রতিদিন দুই হাজার গ্রাহককে সেবা দিতে হয়। ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন ও নাম্বার প্লেটসহ কমপক্ষে ১৫শ গাড়ি চেক করতে হয়। সকাল থেকে শুরু করে অফিস সময় শেষ হবার পরও যতক্ষণ তারা উপস্থিত থাকেন ততক্ষণই কাজ করে দিতে হয়। এতে প্রায়ই সন্ধ্যা গড়িয়ে গেলেও কর্মকর্তাদের অফিসেই থাকতে হয়। মূলত বিপুল সংখ্যক লোকজনের উপস্থিতির সুযোগেই মাঝে-মাঝে দু-চারটা দালাল ভেতরে গিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে। এতে বদনামের দায়ভারও নিতে হচ্ছে অফিস কর্তৃপক্ষকেই।

জোয়ার সাহারা অফিসে গিয়েও দেখা যায়, বিআরটিসির অফিসেই পরাশ্রয়ীর মতো কাজ করতে হচ্ছে। মিরপুরের লাইসেন্স টেস্ট বোর্ড এখানেই। ছোট্ট একটা স্পেসে কোনক্রমে পরীক্ষা নিতে হয় ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক। ফলে এখানেও শত শত লোকের ভিড় সামলেই সেবা দিতে হয়।

চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, মাস দুয়েকের মধ্যে অত্যাধুনিক মানের ভেহিক্যাল ইন্সপেকশন টেস্ট (ভিআইসি) ইকুইপমেন্ট বসানো হচ্ছে। তখন একসঙ্গে ১২টি গাড়ি টেস্ট করা যাবে। এ ছাড়া খুব শিগগির লার্নার লাইসেন্সধারীদেরকে পরীক্ষা পাসের তিন কর্মদিবসের মধ্যে স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হবে।

মাদ্রাসের হয়রানি- এদিকে বিপুল সংখ্যক ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার জন্য আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানির ওপর দায়িত্ব দেয় বিআরটিএ। মাদ্রাস সিকিউরিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই দায়িত্ব পালন করছে মিরপুরে ১২ নং সেকশনের একটি আলাদা অফিসে। যার গোটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে  মাদ্রাস সিকিউরিটি। তারা নিজেদের উদ্যোগে জনবল নিয়োগ দিয়েই তাদের মতোই চালাচ্ছে কর্মকান্ড।

ফলে বিআরটিএ-কে অনেকটা পাশ কাটিয়েই তারা তাদের মতো করে দায়িত্ব পালন করায় গ্রাহকরা প্রায়ই ভোগান্তির ও হয়রানির শিকার হন। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এখানে আরও কঠোর নজরদারি প্রয়োজন যাতে অনিয়ম ও অনৈতিক কর্মকা-ের লাগাম টানা যায়। কিন্তু এখানেও দেখা যায়, প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহকের ভিড়। ভেতরে চলাই দায়। এখানে কর্মরতরা জানিয়েছেন এখানে ৪০টি ডেস্কে ছবি তোলা হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে সবগুলো ডেস্ক চালু নেই। কয়েকটি টেবিলে গ্রাহকের ছবি তোলা ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেয়া হয়। এতে সকাল থেকে রাত হয়ে গেলেও কাজ শেষ হয় না।

সম্প্রতি এক দুপুরে দেখা যায়, হাজারের অধিক লোকের জটলা। তারা কেউ বসা কেউ দাঁড়ানো। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শাহ আলম নামের এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, আমি সকাল আটটায় এসে টোকেন নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। সিরিয়াল অনুযায়ী ১২:৩০ মিনিটে আমার ডাক পড়ে। কিন্তু তারা আমার ছবি বায়োমেট্রিক না নিয়ে বলেন, আপনার ফাইলে ভুল আছে। আমি বলি স্যার ঠিক করে দেন, তখন তিনি বলেন, এভাবে হবে না।

বিআরটিএ অফিসে যোগাযোগ করেন।  নিরুপায় হয়ে বলি, স্যার কিছু একটা করেন। তখন তিনি আমাকে দয়া দেখিয়ে বললেন-ঠিক আছে চা-মিষ্টি খাওয়ার জন্য ১০০০ টাকা নিয়ে আসেন। আমার কাছে গাড়ি ভাড়া ব্যতীত আর কোন টাকা ছিল না। আমার ভাইকে ফোন করে বিকাশে ১০০০ টাকা ক্যাশ করে দেয়ার পরে আমার ছবি তোলেন। এদিকে মুন্না নামের একজন জানান, কিছুদিন আগে দেশব্যাপী বিদ্যুত বিপর্যয়ের দিন কাজ না হওয়ায় পরদিন ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে হাজির হওয়ার পরও ফিরিয়ে দেয়া হয়। তখন এক নিরাপত্তাকর্মী দুজনের কাছে দুহাজার টাকা দাবি করেন। সে দাবি মিটিয়েই কাজ করিয়ে আনতে হয়েছে। সূত্র: জনকন্ঠ

 

প্যা.ভ/তা